পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তিনি ২০১৮ এর নভেম্বর মাসে মিশরের শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত UN Convention on Biological Diversity এর Conference of the Parties (COP) এ বাংলাদেশ ডেলিগেশনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। এছাড়া ডিসেম্বর ২০১৯ এ স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত UNFCCC চিলি Conference of the Party (COP) 25 এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ ডেলিগেশনের সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ রাবার বোর্ডকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপদান করেন এবং পূর্ণাঙ্গ রাবার বোর্ড গঠনের পর এর চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিয়োগ বিধি প্রণয়ন এবং বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের প্রবিধিমালা প্রণয়ন, নির্মল বায়ু আইন এর খসড়াসহ ইট প্রস্তুত ও ভাটা আইন (সংশোধিত) ২০১৯ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল রাবার রিসার্স এন্ড ডেভলাপমেন্ট বোর্ড ( IRR DB ) এর গভর্ণিং বডির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এবং পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এর দায়িত্ব পালনকালে তিনি ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিওতে অনুষ্ঠিত রিও প্লাস ২০ সম্মেলনসহ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক নেগোশিয়েশন সভাসমূহে বাংলাদেশের পক্ষে লিড নেগোশিয়েটর হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ এই সম্মেলনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন COP 17, কাতারে অনুষ্ঠিত COP 18, পোলান্ডের রাজধানী ওয়ারশ এ অনুষ্ঠিত COP 19 এ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর ফলশ্রুতিতে তিনি United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFFCCC) এর আওতাধীন Adaptation Fund Board এর নির্বাচিত সদস্য হিসেবে ২০১৩-১৪ মেয়াদে বাংলাদেশের পক্ষে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
তিনি ২০১৪-২০১৮ সালে বিদ্যুৎ বিভাগ এর অধীন ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী (বাংলাদেশ) লিঃ (ইজিসিবি) এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে কোম্পানীর লাভের পরিমাণ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫ কোটি টাকা হতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দীর্ঘ ৫ বছর পর স্প্যানীশ ঠিকাদার কর্তৃক পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে যায়। এ সংকটকালীন অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ঠিকাদারের প্রায় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পারফরমেন্স গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত করতঃ কোম্পানীর ফান্ডে জমা করা হয় এবং সফল নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়ায় ত্রিপক্ষিয় চুক্তির মাধ্যমে JV partner কে দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করা হয়, যা বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসেও সম্পূর্ন নতুন উদাহরণ। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়েছে। ঠিকাদার পরিবর্তনের উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি এখন অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত অবস্থায় ২০০৭-২০০৯ পর্যন্ত উপ-সচিব (পুলিশ) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের রেশন বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ নীতিমালা পরবর্তীতে এনএসআই, কারাগার, ফায়ার সার্ভিস ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের ঝুঁকিভাতা ও তদন্ত ব্যয় প্রচলন এবং যানবাহন ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের মাধ্যমে পুলিশকে শক্তিশালী করা হয়। এছাড়া ২০০৯-১১ সাল পর্যন্ত উপসচিব (রাজনৈতিক) হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত থাকাকালে মাঠ প্রশাসনে সার্টিফিকেট মামলার অনাদায়ী অর্থের উপর প্রদত্ত সকল অডিট আপত্তি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন এবং সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে টীম সিস্টেম এর পরিবর্তে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ন্যায় শাখা সিস্টেম প্রচলনের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া তিনি মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়েও দায়িত্ব পালন করেন।
জনাব মনসুরুল আলম ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন (১৯৮৬ ব্যাচ, ৮ম বিসিএস)। তিনি বরগুনা কালেক্টরেটে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। বরগুনা কালেক্টরেটে তিনি ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট, এনডিসি, আরডিসি, জেলসুপার, ট্রেজারী অফিসার, জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
জনাব আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার উজিরপুর গ্রামে ১৯৬৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম কে এ, ছিদ্দিক মিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁর মাতা ছিলেন গৃহিনী।
তিনি এ এস রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয়, পটিয়া থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে রসায়ন শাস্ত্রে সম্মানসহ এমএসসি পাশ (১ম শ্রেণীতে ৫ম স্হান) করেন। তিনি শিক্ষা জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধা বৃত্তি লাভ করেন। এছাড়া চাকুরীতে যোগদান করার পর বেলজিয়াম সরকারের বৃত্তি নিয়ে Vrije University Brussels থেকে ১৯৯৬ সালে হিউম্যান ইকোলজি (পরিবেশ বিজ্ঞান) এ ডিস্টিংশনসহ এম এস ডিগ্রী লাভ করেন।